বাবা ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা। আর ছেলে ইব্রাহিম খলিল—পরিচিত স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা হিসেবে, যদিও দলে তার কোনো পদ নেই। তবু নিজেকে নেতা পরিচয় দিয়ে দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার ১০ নম্বর হরিরামপুর ইউনিয়নের বন্দরপাড়াসহ আশপাশ এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন তিনি। বন বিভাগের লট বাণিজ্যে লুটপাট, টেন্ডার দখল, চাঁদাবাজি ও জমি দখল—এসবের জন্য নিজস্ব বাহিনী ব্যবহার করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ জানার জন্য সাংবাদিক যোগাযোগ করলে ইব্রাহিম খলিল সরাসরি হুমকি দেন। একই সঙ্গে দ্য নিউজ-এর সম্পাদক ও প্রকাশককে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন—“সে যদি এলাকায় আসে, তাকে ঝুলিয়ে রাখবো।” এই হুমকির ঘটনা উল্লেখ করে ঢাকার হাতিরঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করা হয়েছে, যেখানে ইব্রাহিম খলিলের পরিচয়, হুমকির ধরন ও সংশ্লিষ্ট তথ্য বিস্তারিতভাবে উল্লেখ রয়েছে।

এলাকাবাসীর দাবি, ওই সময় থেকেই খলিলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ জমতে শুরু করে। সামাজিক বনের লট ভাগাভাগিতে অস্বাভাবিক প্রভাব বিস্তার, কুষ্টিয়া পাড়ায় সামাজিক বন বিভাগের প্রায় ১০ একর জমি দখল করে প্রথমে আমের বাগান এবং পরে ঘাস চাষের অভিযোগ—এসবই তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের অংশ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন যে ঘটনাটি সত্য।
এছাড়া মধ্যপাড়া খনির পাথরের ব্যবসায় দালালি ও কমিশনভিত্তিক কার্যক্রম, জমি–জমা নিয়ে বিভিন্ন বিরোধে হস্তক্ষেপ, এবং সাধারণ মানুষকে বিভিন্নভাবে চাপে রাখা বা প্রভাবিত করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অনেকেই খলিলের এসব কর্মকে ভয়ংকর, বেপরোয়া এবং নিয়ন্ত্রণহীন বলে উল্লেখ করেন। তবে আতঙ্কের কারণে কেউই প্রকাশ্যে নাম বলতে চান না।
স্থানীয় সূত্র মতে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকেই খলিল স্বেচ্ছাসেবক দলের ভেতরে নিজের অবস্থান শক্ত করতে শুরু করেন এবং প্রভাব দিনদিন বাড়তে থাকে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিবেদকের সঙ্গে কথোপকথনের একপর্যায়ে খলিল আরও হুমকি দিয়ে বলেন, অভিযোগ করলে অন্যের ওপর দায় চাপিয়ে বিপদে ফেলবেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের ফার্স্ট জয়েন্ট সেক্রেটারি নুরুল হুদা বাবু বলেন, “সংগঠনের কেউ কোনো অসদাচরণে যুক্ত থাকলে অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিএনপি বা স্বেচ্ছাসেবক দল কোনো অনিয়মকে প্রশ্রয় দেয় না।” বন্দরপাড়ার মানুষের চোখেমুখে আতঙ্ক, কথাবার্তায় অস্থিরতা এবং অভিযোগের ঘনঘটা স্পষ্ট করে—এলাকায় একটি অদৃশ্য প্রভাবচক্র সক্রিয়, যার কেন্দ্রে রয়েছেন ইব্রাহিম খলিল বলে মনে করেন স্থানীয়রা।