জন্ম মৌলভীবাজারে। বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী, মা সরকারি চাকরিজীবী। পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার ব্যবসা দেখা কিংবা বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিং এ কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন—শৈশব থেকেই যেন ভিন্নভাবে বেড়ে উঠছিলেন সাজ্জাদ সাজু।
২০১২ সালে, মাত্র কয়েক বন্ধুর উদ্যোগে শুরু হয় তার ফটোগ্রাফির গল্প। অনেক কষ্টে ধার করে ও প্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি করে কেনা হয় প্রথম DSLR ক্যামেরা। শুরু হয় যুদ্ধ—ক্যামেরা চালানো শেখা, ম্যানুয়াল লেন্স দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্র্যাকটিস, আর স্ট্রিট ফটোগ্রাফি। একদিন এক আত্মীয়ের বিয়েতে ছবি তুলতে গিয়ে হাতে আসে প্রথম আয়—৬ হাজার টাকা। সেই মুহূর্তই ছিল সাজুর জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। বুঝতে পারেন, এই শিল্প দিয়েও গড়া যায় ভবিষ্যৎ। শুরু হয় ওয়েডিং ফটোগ্রাফির পথচলা। দিনরাত পরিশ্রম, এডিট শেখা, সীমিত সুযোগের ভেতর দিয়ে এগিয়ে চলা—সবই ছিল জীবনের অংশ।

২০১৭ সালে এক রাতের সিদ্ধান্তে স্ত্রীকে নিয়ে চলে আসেন ঢাকা। শুরুটা সহজ ছিল না। সুযোগের আশায় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছেন, কিন্তু কেউ সুযোগ দেননি। অবশেষে স্ত্রীর সহযোগিতায় এক বিউটি স্যালুনে ফটোগ্রাফার হিসেবে কিছুদিন কাজ করার সুযোগ পান। এরপর আরও কিছু অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের পর সাহস করে গড়ে তোলেন নিজের প্রতিষ্ঠান—“সাজ্জাদ সাজু ফটোগ্রাফি: ওয়েডিং আর্কাইভস”। প্রথম বড় কাজ আসে নাটকীয়ভাবে—সেনাবাহিনীর এক মেজরের বিয়ে। সেই সুযোগটিকেই শ্রদ্ধার সাথে ধারণ করেন সাজু।
এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। গত আট বছরে ৬ হাজারের বেশি ইভেন্ট সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন সাজ্জাদ সাজু। শুধু বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীরই ১৫০০ এরও বেশি অফিসারের বিয়ের আয়োজন কভার করেছেন তিনি। তার ছবির ফ্রেমে বন্দী হয়েছে অসংখ্য নবদম্পতির আজীবনের স্মৃতি। একইসাথে মার্কেটিং এর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তিনি বর্তমানে বিভিন্ন ইনস্টিটিউট ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষক হিসেবেও কাজ করছেন। তার স্বপ্ন—বাংলাদেশের তরুণরা যেন নিজেদের অবস্থান থেকে সেরাদের আসনে পৌঁছাতে পারে। সাজ্জাদ সাজু বলেন— “ওয়েডিং ফটোগ্রাফি এমন এক শিল্প, যেখানে কোটি টাকার আয়োজন শেষ পর্যন্ত স্মৃতিতে রয়ে যায় শুধু আমাদের ছবি ও ভিডিওতে। শিল্পী হিসেবে আমি বিশ্বাস করি—টাকার পেছনে না ছুটে শিল্পের পেছনে ছুটুন।
একদিন দেখবেন, টাকা আর পরিচিতি আপনাকে খুঁজে আসবে।” এগিয়ে যাওয়ার পথে তার নতুন স্বপ্ন এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। বাংলাদেশের ওয়েডিং ফটোগ্রাফিকে বিশ্বমঞ্চে পৌঁছে দিতে তিনি কাজ শুরু করেছেন ইতিমধ্যেই। সাজ্জাদ সাজুর জীবনকথা আমাদের শেখায়—যদি মনের গভীর থেকে চাওয়া থাকে, তবে সীমাবদ্ধতা কোনো বাধাই নয়। ক্যামেরার ভিউফাইন্ডারের মতোই, জীবনের ফ্রেমও সাজানো যায় শ্রম, অধ্যবসায় আর স্বপ্ন দিয়ে।